বারবার যে কারণে ফিরে আসেন সৌম্য

  ক্রীড়া প্রতিবেদক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:২১, শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
সৌম্য সরকার
সৌম্য সরকার

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন।’ সৌম্য সরকারের বেলায় সেটা একটু অন্যভাবে বলাই যায়, ‘ফিরতে হলে জাতীয় দলে, দেখবে সেটা নির্বাচকে।’ শুনতে একটু অবাক লাগলেও এটাই আসলে বাস্তবতা। ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিক প্রত্যাশানুযায়ী তার ব্যাট হাসে না সেভাবে। পার্ট টাইম বোলার হিসেবে মাঝেমধ্যে চমক দেখান। উইকেট পেলেও রান করে মন ভরাতে পারেন না ভক্তদের। তবে নির্বাচকেরা বারবার তার ঐসব ‘অঘটন’ পারফরম্যান্সে ভরসা করেই ফিরিয়ে আনেন জাতীয় দলে। কিছু না করেও তার এভাবে ফিরে আসা তাই গৌরি সেনকে নিয়ে সেই উক্তিটাই মিলে যায়।

এই কথা আবারও উঠছে কেননা সৌম্য সরকার ফের জাতীয় দলে ফিরেছেন। এ মাসেই বাংলাদেশ তিনটি করে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ডে। দুই ফরম্যাটেই আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি কেন বারবার ফিরে আসেন, এটা যেমন ক্রিকেট ভক্তরা বুঝতে পারেন না। তেমনি নির্বাচকদের কাছেও মিলে না সন্তোষজনক কোনো উত্তর। তাদের কণ্ঠে ঘুরে ফিরে শোনা যায় অভিজ্ঞতা আর ঘরোয়া পারফরম্যান্স বিবেচনা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেস বোলিং অলরাউন্ডার তকমা।

ঘরোয়া লিগ বিবেচনা করলে সবশেষ জাতীয় লিগের রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি সপ্তম স্থানে। ৬ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট হাতে ৪৩৬ রান করেছেন। তার সর্বোচ্চ ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। গড় ৪৮.৪৪। ১১ ইনিংসে বল হাতে পেয়েছেন ১৭ উইকেট। সর্বোচ্চ ৩১ রান খরচায় ৬ উইকেট এক ইনিংসে।

তবে এটা ছিল লাল বলের টুর্নামেন্ট। সৌম্য ফিরেছেন সাদা বলের ক্রিকেটে। এই সংস্করণে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সেরা ২০-এ ও নেই তার নাম। ১২ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট করে তার রান ২৯৩। যার মধ্যে একটি আবার সেঞ্চুরি (১০২)। গড় ২৬.৬৩, স্ট্রাইক রেট ৮৩.২৩। বোলারদের তালিকায় তার নাম ‘আতসী কাঁচ’ দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ১১ ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে যে নামটা বহু পেছনে।

তবু নির্বাচক হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, অভিজ্ঞতা আর অলরাউন্ডার বিবেচনা তাকে নেওয়া হয়েছে দলে। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘সৌম্য দলে এসেছে… এবার আসলে আমাদের কিছু ফোর্সফুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংখ্যা আমাদের কমে গেছে। নিউজিল্যান্ড সফর আমাদের জন্য সবসময়ই একটু কঠিন হয়। সেখানে আমরা সাধারণত অনেক স্ট্রাগল করি। সেখানে নতুন কাউকে দেখার থেকে আমাদের মনে হয়েছে, এমন কাউকে নেই যে এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে।’

সৌম্যর সম্ভাবনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না কখনো। সামর্থ্যের জায়গা থেকে নিজেকে প্রমাণ করে গেছেন বারবার। তবে হোঁচট খাওয়া সৌম্য উঠে দাঁড়াতে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেটিও বারবার। তাঁকে দিয়ে চেষ্টা কম করানো হয়নি। কিন্তু সৌম্য যেন নাছোড়বান্দা, ফিরবেনই না!

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সৌম্যকে কতটা দলে চান, সেই প্রমাণ আবারও মিলল। তেমন কিছু না করেই ফিরলেন জাতীয় দলে। সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেখানে শূন্য রানে ফেরা। যে টি-টোয়েন্টি সর্বশেষ খেলেছেন, সেটা গতবছরের বিশ্বকাপে, সেখানে ২০ রান করে ফিরেছিলেন।

তবুও তার ওপর আস্থা! কারণ, সৌম্যর ব্যাট নয় শুধু, এখানে বোলিংয়ের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। যা হাবিবুল বাশারের কথায় নিশ্চিত হওয়া যায়, ‘পাশাপাশি ওর একটু অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে। এই ভাবনা থেকে তাকে নেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব ভালো পারফর্ম যে করেছে, তা নয়। তবে ৪৮ গড় খুব খারাপ নয়, যদিও এর কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করার থাকে। চিন্তা করা হয়েছে যে, যেহেতু এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে ও পারফর্ম করেছে, অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে, সব মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

হাথুরুসিংহের প্রথম সময়ে, ২০১৫ সালে সৌম্য নিজের জাত চিনিয়েছেন। এই কোচের কণ্ঠে সৌম্যকে নিয়ে প্রশংসা সবসময়ই ছিল। কথিত আছে, হাথুরুসিংহের পছন্দেই বারবার সৌম্য দলে ফিরছে। এ ব্যাপারে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমার মনে হয়, কোচের ইনপুট নিয়ে খুব বেশি আলাপ হওয়া উচিত নয়। দল যখন হয়, সবার ইনপুট নিয়েই করা হয়। সবাই একমত যখন হয়, তখনই দলটা গড়া হয়। আমাদেরও কিছু পছন্দ থাকে, কোচেরও থাকে। এমন নয় যে একজন ক্রিকেটার শুধু একজনের পছন্দেই দলে আসে।’

Share This Article