আমার ওয়ালেটে দুইটা ৫০০ টাকার নোট!

  বেলায়েত হোসাইন
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৩০, শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
বেলায়েত হোসাইন
বেলায়েত হোসাইন

পাঠাও'র ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলাম, আমার ওয়ালেটে দুইটা ৫০০ টাকার নোট। আমি খানিকটা বিস্মিত হলাম। মাথা চুলকাই আর ভাবি-- আমার ওয়ালেটে তো ৫০০ টাকার নোট ছিল মাত্র একটি। সাথে আরো খুচরা দুইএকশ টাকা। আরেকটা ৫০০টাকার নোট তাহলে কোথা থেকে আসলো?

এই পৃথিবীতে একজন পুরুষ মানুষ মোটামুটি সব ধরনের ভার নিতে পারে। কিন্তু শূন্য মানিব্যাগ!! এটা পুরুষ মানুষের মনস্তত্ত্বকে অনেক বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রাখে। ভালোবাসার অভাবেও পুরুষ মানুষ অতটা কাতর হয়না, যতটা অর্থাভাব তাকে ঘিরে ধরে।  
একজন পুরুষ বাইরে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে বেড়ায়। রাজ্যের সকল চিন্তা নিয়ে মাথা ঘামায়। কেবল একজন নারীই পারে, অশান্ত ওই মানুষটাকে শান্ত রাখতে। পুরুষের রাগ, ঘাড়ত্যাড়ামি। সবকিছু পানির মত হয়ে যায়, শুধু তার ঘরটা শান্ত থাকলে। ঘরের মানুষটাই পারে তাকে আগলে রাখতে।

এই ধরুন আমি। সবার কাছে একজন রাগী মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু, আমি জানিনা- আজ অব্দি আমি অকারণে কোথাও রাগ করেছি কিনা! আমার কাছে,, আমার সকল রাগের ব্যাখ্যা খুব স্পষ্ট। অযৌক্তিক কারণে কিংবা কারো পায়ে পড়ে আগ-বাড়িয়ে ঝগড়া করার মত মানসিকতা নিয়ে আমি পারতপক্ষে চলি না। আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হয়েছে কিংবা কারো হক নষ্ট হয়েছে,, আমার জ্ঞাতসারে তা প্রায় অসম্ভব। শুধু অন্যায়টা মেনে নিতে পারি না,,, এই আমার দোষ। এই দোষে কত মানুষের সাথে যে সম্পর্ক নষ্ট হলো!

সবমিলিয়ে একজন অগোছালো, রাগী আর এলোমেলো স্বভাবের মানুষ আমি। মোটাদাগে এভাবেই মানুষ আমাকে চেনে। কিন্তু এই এলোমেলো মানুষটার পেছনে একজন নারী আছেন, যিনি সযত্নে আগলে রাখেন আমাকে। আমার প্রিয় সহধর্মিণী। যে নারী আমার জীবনে আসার পর থেকে আমার এলোমেলো জীবনে গোছাল ভাব শুরু হয়েছে। নিয়ম করে খাওয়াদাওয়া, স্বাস্থ্যের যত্ন, মনের যত্ন এমনকি আমার ক্যারিয়ার- সবকিছুতে যিনি অকুণ্ঠ সমর্থন দেন, তিনি আমার সহধর্মিণী। আমার স্ত্রী।

এই নারী আমার জীবনে আসার পর থেকে আমি সময়মত ঘরে ফেরা শিখেছি। অফিস শেষ হলে অযাচিত আড্ডা এখন আর আমাকে টানেনা। মনে হয়- কেউ একজন দরজার ওপারে আমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমাকে খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।

আমি আর আগের মত রাত জাগি না। খুব নিয়ম করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়। আমি আর আগের মত খালি পেটে ঘুরি না। খুব যত্নসহকারে আমার খাবার পরিবেশন করা হয়। অসুখ হলে ডাক্তার কাছে না গিয়ে পড়ে থাকার সুযোগ আর আমার জীবনে এখন নেই। আমাকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
আমার ধারণা,, এই যে আমার ওয়ালেটে ৫০০ টাকার একটি বাড়তি নোট। এটা তিনিই রেখে দিয়েছেন গোপনে। সম্ভবত, আমার শূন্য মানিব্যাগ আমার চেয়ে তাকে বেশি উদ্বিগ্ন করে।

ফেসবুক থেকে সংগ্রহ

Share This Article