কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ

  আকিব মাহমুদ
  প্রকাশিতঃ রাত ০১:৩১, মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২৩ মাঘ ১৪৩০
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

• খেলাপি ধরতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও হাইকোর্টের সমন্বয়ের অভাব


আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক কোম্পানি আইনের পাশাপাশি সময় সময় নীতিমালা (গাইডলাইন ও প্রজ্ঞাপন) জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩০ বছরের বিভন্ন সময়ে সংস্থাটি প্রয়োজন অনুযায়ী এরকম নীতিমালা জারি ও পরিবর্তন করেছে। তারপরও ব্যাংকিং খাতের সুশাসন এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এবার খেলাপিদের ধরতে আবারও রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এই নীতিমালা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে। 
তারা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় নীতিমালা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। যার কারণে আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরেনি। নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকার ও আইন বিভাগেরও স্বদিচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো মাত্র ৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ওই খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩৩ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি। এই খেলাপির লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নীতিমালা জারি করেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো খেলাপি দিনদিন বেড়েছে। 
বিশেষ করে বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালকদার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় খেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করেন। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে এই ছাড় দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। আবার এই নির্দেশনায় এসব খেলাপিদের নতুন করে ঋণ দিতেও বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। এই নীতিমালা জারির পরের প্রান্তিকেই খেলাপি বেড়েছিলো ৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপিদের বিস্তর সুবিধা দিয়েও এর লাগাম টানা যায়নি।  
তথ্য বলছে, বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়ত্ব নেওয়ার সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বতর্মান গর্ভনেরর সময়েই খেলাপি বেড়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছে, শুধু বারবার নীতি পরিবর্তন করলেই খেলাপি ঋণ কমবে না। নীতির পরিবর্তনের পাশাপাশি নীতির বাস্তবায়নও জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকার ও হাইকোর্টেরও স্বদিচ্ছা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, উন্নত দেশগুলোতে অর্থঋণের বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত জানায় না। বাংলাদেশে এ ধরনের চর্চা থাকার কারণে খেলাপিরা এ সুযোগ নিচ্ছে। তাই খেলাপি কমাতে কোর্ট, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যথায় খেলাপিদের দৌরাত্ম্য কমানো যাবে না।
নতুন রোডম্যাপ কতটা কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএমএফের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে ও ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে নতুন এ রোডম্যাপের প্রয়োজন ছিল। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা কার্যকর করতে পারে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেই রোডম্যাপ করেছে তা বাস্তবায়নে তাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তারা যেই রোডম্যাপ করেছে সেখানে যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোন বিধান না থাকে তাহলে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশে প্রচলিত কথা আছে যে, হাইকোর্টে গেলেই স্থগিতাদেশ পাওয়া যায়। বিষয়টি তেমন নয়, নীতিমালায় সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোন বিধান না থাকলেই হাইকোর্টে তাতে হস্তক্ষেপ করে না। যদি সাংঘর্ষিক থাকে তাহলে তো খেলাপি ব্যক্তি তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেই। তারও তো আইনী সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এজন্য কোন নীতিমালা করার আগে আইনী বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। 
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বললেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) দেখানোর জন্যই করা হয়েছে। আদতে এই নীতিমালায় খেলাপি ঋণের লাগাম টানা সম্ভবনা কম। তবে যদিও খেলাপি কমানো যায় তাহলে ব্যাংক খাতের জন্য নতুন বার্তাও তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, খেলাপিদের ধরতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে রোপম্যাপ দিয়েছে, এটা ভালো। অতীতে এ রকম যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ছিল কাগুজে। এটাও তেমন হবে কি না, তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নে তারা সঠিক উদ্যোগ নিচ্ছে কি না, তার ওপর।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শক্ত হাতে কোনো পদক্ষেপই বাস্তবায়ন করতে পারে না। যতটুকু শোনা যাচ্ছে অবলোপনের সময় কামানো হচ্ছে, আবার ঋণখেলাপির সময়সীমা ৯ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাসে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এগুলো করলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। খেলাপি ঋণ না কমে আরও বাড়বে। ব্যাংকগুলোকে কিছু করতে বললেই তারা সময়ক্ষেপণ করে। এটা পুরোনো রোগ। তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।
আর ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, খেলাপিদের ধরতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেই পদক্ষেপ নিয়েছে এটা ভালো দিক। বিশেষ করে খেলাপিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণার কারণে খেলাপিরা এই নীতিকে গুরুত্ব দিবে। এখন দেখার বিষয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এটা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারে। তারা যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত থাকে তবে খেলাপি কমে যাবে বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে নীতির সঠিক বাস্তবায়নের দিকেই গুরুত্ব দিলেন সাবেক এই ব্যাংকার।
তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে সব ধরনের ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে কোন গ্রাহককে নতুন করে ঋণ খেলাপি হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়নি। এ সময়ে উল্টো ব্যবসায়ীদের প্রনোদনা হিসেবে প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এ ঋণের অর্ধেক সুদ সরকার বহন করে। তবে এতো সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি বাড়তে শুরু করেছে। করোনাকালীন সময়ে দেওয়া ঋণের কিস্তি স্থগিতের সুবিধাটি দুই বছর পর ২০২২ সালে তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনাকালীন সুবিধা দেওয়ার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এরপর নামমাত্র ডাউন পেমেন্টের সুবিধায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের খেলাপি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

Share This Article


মঙ্গলবার দর পতনের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ব্যাংক

মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে এপেক্স ট্যানারি

মঙ্গলবার লেনদেনের নেতৃত্বে সোনালী আঁশ

সোমবার ব্লক মার্কেটে লেনদেনের নেতৃত্বে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ

সোমবার দর পতনের নেতৃত্বে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্সুরেন্স

সোমবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে জেএমআই সিরিঞ্জ

সোমবার লেনদেনের নেতৃত্বে এশিয়াটিক ল্যাবরটরিজ

রোববার ব্লক মার্কেটে লেনদেনের নেতৃত্বে লাভেলো আইসক্রিম

রোববার দর পতনের নেতৃত্বে এডিএন টেলিকম

রোববার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম

রোববার লেনদেনের নেতৃত্বে মালেক স্পিনিং

দাবদাহে ঢাকায় বছরে ক্ষতি ২৭০০ কোটি ডলার