মশলার এলসিতে কোকেন আমদানি

  তারিকুল ইসলাম
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৩৮, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৩ পৌষ ১৪৩০
  • পাচারের তথ্য গোপন করেছে যমুনা ব্যাংক
  • রাসেল অ্যাপারেল্সের ৭০ হাজার ডলার পাচার সন্দেহ
  • সন্দেহজন লেনদেনের বিষয়ে অবহিত করেনি যমুনা ব্যাংক

বাণিজ্যিক খাতে বড় অবদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০০১ সালে ৩য় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে যমুনা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলেও গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা মিটাতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি। কিন্তু বিভিন্ন সময়েই অনিয়মের কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এবার অর্থ পাচারের তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে যমুনা ব্যাংকের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ব্যাংকটির চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাখার গ্রাহক নূর ট্রেডিং কোম্পানি যমুনা ব্যাংকে এলসি খুলে মশলা আমদানির ঘোষণায় কোকেন আমদানি করে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, যমুনা ব্যাংকের নারায়নগঞ্জ শাখার গ্রাহক রাসেল অ্যাপারেল্স ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তিন ধাপে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন। কিন্তু ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত এই রপ্তানির বিপরীতে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০৬ ডলারের দেশে এসেছে। বাকি ৭০ হাজার ৩২২ ডলার দেশে ফিরত আসেনি। এক্ষেত্রে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএফআইইউকে অবহিত করার কথা থাকলেও যমুনা ব্যাংক তা এগিয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা এক্সপ্রেস ট্রেড ক্যাপিটাল যমুনা ব্যাংকের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জের রাসেল অ্যাপারেল্স থেকে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ ডলারের পন্য ক্রয় করে। পরে একই বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রাসেল অ্যাপারেল্স পন্য জাহাজীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি করেন। পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৪ ধাপে এই রপ্তানির ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০৬ ডলার দেশে এসেছে। বাকি অর্থ দেশে না এলেও যমুনা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা বা প্রধান শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বিএফআইইউকে অবহিত করেনি। এটিকে সন্দেহ জনক বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাখার গ্রাহক নূর ট্রেডিং কোম্পানি যমুনা ব্যাংকে এলসি খুলে মশলা আমদানির ঘোষণায় কোকেন আমদানি করে। এ জালিয়াতির ঘটনায় শাখার ব্যবস্থাপককে দোষী করে দায়সারা ব্যবস্থা নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে যমুনা ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহযোগিতা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএফআইইউ একটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ঘটনাটি ২০১৭ সালের। তবে, বিএফআইইউ’র পরিদর্শন দল ঘটনাটির তদন্তে নেমে আরো জালিয়াতির তথ্য উদঘাটন করে। পরবর্তীতে সংস্থাটির তৎকালীন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সমর্থ হয় যমুনা ব্যাংক। এছাড়া, এত বড় জালিয়াতির পরও ব্যাংকটি গ্রাহক নূর ট্রেডিং কোম্পানির ৮.৬২ কোটি টাকারও বেশি দায় অবলোপন করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নূর ট্রেডিং কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে মোট ৩.৮১ লাখ ডলার সমমূল্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলে যমুনা ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখায়। প্রথম এলসিতে (এলসি নং- ৩০৪৬১৭০১০৪২৮) দেখা যায়, কোম্পানিটি ১.৮৭ লাখ ডলার মূল্যের জিরা আনার ঘোষণা দেয় ভারত থেকে। কিন্তু ভারতের পরিবর্তে জিরা আনার জন্য পোর্ট অফ লোডিং দেখানো হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য থাকলেও অন্য একটি দেশের বন্দর হয়ে পণ্য আমদানিকে ওভার প্রাইসিং দেখানোর সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তারা। আবার, ইউএই থেকে আমদানি হলেও পণ্য শিপমেন্ট করা হয়েছে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে। এদিকে, পণ্য আমদানি করা হয় এলসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর, যা খুবই সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেন কর্মকর্তারা।

একইভাবে, দ্বিতীয় এলসি (নং- ৩০৪৬১৭০১০৬১৭) জিরা আমদানির ঘোষণায় ৯৩,৬০০ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রেও এলসিটির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ার পর পণ্য আসে আরব আমিরাতের পরিবর্তে কলম্বোর বন্দর থেকে। তৃতীয় এলসিতে (নং- ৩০৪৬১৭০১০৬০৩) ৪০,৬০০ ডলারের গোল মরিচ ভিয়েতনাম থেকে আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে, এলসির বিল অব লোডিং (নং-ভিএনএসজিএন১৬৯১৯৬) থেকে দেখা যায়, এ আমদানি আরব আমিরাতের জেবেল আলী বন্দর থেকে শিপমেন্ট হয়েছে।

এছাড়া ইরাক থেকে কাঁচা খেজুর আমদানির জন্য এলসি (নং- ৩০৪৬১৭০১০৬১৪) খোলা হয় ৬০,০০০ ডলার সমমূল্যের। এ আমদানি সংঘটিত করার জন্য পোর্ট অব লোডিং দেখানো হয় আরব আমিরাতের যেকোনো বন্দর। ইরাক থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু থাকলেও পণ্যটি অন্য দেশের বন্দর থেকে আমদানি করা সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করে তদন্ত দল।

জানা গেছে, এসব আমদানিকৃত পণ্য আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। খালাসের জন্য থাকা এসব পণ্যে বিপুল পরিমাণ কোকেন পাওয়া যায়। এ ঘটনায় যমুনা ব্যাংকের গ্রাহককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে গ্রাহকের ব্যাংকিং কার্যক্রমও বন্ধ রাখে যমুনা ব্যাংক। পরবর্তীতে জালিয়াত এ গ্রাহকের ৮.৬২ কোটি টাকার দায় অবলোপন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ দায় অবলোপন করায় প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত দল। এছাড়া, আমদানির নামে টাকা পাচার হওয়ার ঘটনায় কোন যুক্তিতে অবলোপন করা হয়েছে, এর ব্যাখ্যা চায় বিএফআইইউ। কিন্তু এ বিষয়ে ব্যাংক কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

এছাড়া আমদানি ও ঋণ কার্যক্রমের বিষয়ে শাখা বা প্রধান কার্যালয় সাসপিশিয়াস ট্রানজেকশন রিপোর্ট প্রদান করেনি। এমনকি সতর্কতামূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি ব্যাংকটি। দায় অবলোপন করার পরেও টাকা পাচারের সম্ভাবনাও যাচাই করেনি যমুনা ব্যাংক।

এ বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যাখ্যা প্রদান করে ব্যাংকটি। ব্যাখ্যায় ব্যাংকটি দাবি করে, কোকেনের চালানটি ব্যাংকের আমদানি সংশ্লিষ্ট নয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আনা পণ্যে কোকেন পাওয়ার পরও গ্রাহকের বৈদেশিক লেনদেনে সম্ভাব্য টাকা পাচার যাচাই ও সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদনে দাখিল না করায় ব্যাংকটিকে মানি লন্ডারিং আইন, ২০১২ এর ২৩(৫) ধারায় শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত দল প্রতিবেদন দেয়।তবে, এ ঘটনায় বিএফআইইউ এর তৎকালীন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে যমুনা ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউই বক্তব্য প্রদান করেননি। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে মেসেজ করলেও তিনি তার উত্তর দেননি।

Share This Article


মঙ্গলবার দর পতনের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ব্যাংক

মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে এপেক্স ট্যানারি

মঙ্গলবার লেনদেনের নেতৃত্বে সোনালী আঁশ

সোমবার ব্লক মার্কেটে লেনদেনের নেতৃত্বে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ

সোমবার দর পতনের নেতৃত্বে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্সুরেন্স

সোমবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে জেএমআই সিরিঞ্জ

সোমবার লেনদেনের নেতৃত্বে এশিয়াটিক ল্যাবরটরিজ

রোববার ব্লক মার্কেটে লেনদেনের নেতৃত্বে লাভেলো আইসক্রিম

রোববার দর পতনের নেতৃত্বে এডিএন টেলিকম

রোববার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম

রোববার লেনদেনের নেতৃত্বে মালেক স্পিনিং

দাবদাহে ঢাকায় বছরে ক্ষতি ২৭০০ কোটি ডলার