ইতিহাসে রেকর্ড মুনাফা স্টান্ডার্ড ব্যাংকের
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিট মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির বাংলাদেশ অফিসের নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর আগে ২০২২ সালে বছর নিট মুনাফা করেছিল ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
সে হিসাবে ২০২৩ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৪১ শতাংশেরও বেশি। ২০২১ সালে ব্যাংকটি ৭৫৮ কোটি টাকার নিট মুনাফায় ছিল।
জানা গেছে, ব্যাংকটি মাত্র ১৮টি শাখা ও একটি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো নিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ঋণস্থিতি ৩০ হাজার কোটি টাকারও কম। এ পরিমাণ পোর্টফোলিও নিয়েও দেশের সবচেয়ে বেশি নিট মুনাফা করে আসছে ব্যাংকটি।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদ খাত থেকে ব্যাংকটির আয় আগের বছরের তুলনায় গত বছর ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে এ খাত থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের নিট আয় ছিল ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। গত বছর তা ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে, সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকেও ব্যাংকটির আয় বেশ বেড়েছে। ২০২২ সালে এ খাত থেকে ৭৩৫ কোটি টাকা আয় করলেও গত বছর তা ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে গত বছর কমিশন, এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের আয় কিছুটা কমেছে।
২০২২ সালে এ খাত থেকে ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা আয় করলেও গত বছর তা ১ হাজার ২৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে ৪ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা পরিচালন আয় করেছে ব্যাংকটি। এর আগের বছর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের পরিচালন আয় ছিল ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
পরিচালন আয় অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও ব্যয় নিয়ন্ত্রিত রাখতে পেরেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ২০২২ সালে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় ছিল ৭৯২ কোটি টাকা। গত বছর এ খাতে ব্যয় করেছে ৮৩০ কোটি টাকা।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে ব্যাংকটি ৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পায়। এ থেকে সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ ও কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা করেছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।
বহুজাতিক ব্যাংকটির বিনিয়োগের বিপরীতে গত বছর আয়ের (আরওআই) অনুপাত ছিল ২০.৯১ শতাংশ। আর সম্পদের বিপরীতে আয় (আরওএ) হয়েছে ৪.০৯ শতাংশ। যদিও দেশের ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সূচকে খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। দেশের সবচেয়ে ভালো বেসরকারি ব্যাংকের আরওআই ৬ শতাংশেরও নিচে। আর এর ক্ষেত্রে এ হার সর্বোচ্চ ২ শতাংশের ঘরে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়ী হিসাবের বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দশমিক শূন্য ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করে। আর তিন মাস মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির সুদহার ১ থেকে ৩ শতাংশ।
আমানতের মেয়াদ বেশি হলে এ সুদহার আরো কমে যায়, যেখানে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো তিন মাস মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে পরিশোধ করছে ১০ শতাংশের বেশি সুদ। মেয়াদ বাড়লে আরো বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে।
দেশে ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান) স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের। বর্তমানে ব্যাংকটির স্প্রেড ৮.০৬ শতাংশ। আমানতের গড় সুদহার শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ হলেও বিতরণকৃত ঋণের গড় সুদ ৮.৫৮ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২৯ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ছিল ঋণ, ক্যাশ ক্রেডিট ও ওভারড্রাফট। আর বিল ক্রয় ও ডিসকাউন্ট ছিল ১০ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। গত বছর শেষে এ ধরনের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে বহুজাতিক ব্যাংকটির বাংলাদেশ অফিসের সম্পদের পরিমাণ ৬০ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের আমানত জমা রয়েছে ৪১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। গত বছর পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ক্রমপুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ১০ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এ অর্থ ইকুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি।