এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক বেড়েছে ১৫ শতাংশ

  আকিব মাহমুদ
  প্রকাশিতঃ রাত ০২:০৮, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৩ ফাল্গুন ১৪৩০
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো
  • এক বছরে লেনদেন বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ
  • ডিসেম্বরে দৈনিক লেনদেন চার হাজার ১৭ কোটি টাকার বেশি
  • বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত হিসেবে বেড়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৫টি
  • ডিসেম্বর শেষে নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ আট হাজারে

ঘরে বসেই দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধসহ নানা কারণে দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের(এমএফএস)।তৃণমূল পর্যায়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এ ব্যাংকিং সেবা। ক্রমেই মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে লেনদেন। সমানভাবে বেড়েই চলেছে গ্রাহক সংখ্যাও। একবছরে এ ব্যাংকিং সেবায় লেনদেন বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর গ্রাহক বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে। ওই মাসে এ সেবা ব্যবহার করে মোট লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ মাসে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৭ কোটি টাকার বেশি। এর আগে ঈদুল ফিতরের মাস এপ্রিলে দৈনিক লেনদেন চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। আর ঈদুল আজহার মাস জুনে তা চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে লেনদেন হয়েছিলো ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিলো ৯৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে লেনেদেনে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। 

এমএফএস কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে প্রতিদিনই এ সেবায় হাজার হাজার গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে।

এদিকে, ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮টি। এই হিসাবে ডিসেম্বরে নতুন গ্রাহক বেড়েছে প্রায় চার লাখ ১১ হাজার। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিলো ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত হিসেবে বেড়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৫টি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত হিসেবে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। যদিও মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের অর্ধেকেরই বেশি নিষ্ক্রিয়। গত ডিসেম্বর শেষে নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ আট হাজার।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। একইসঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। এছাড়া সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করায় এই খাতের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম নতুন ধ্বনিকে বলেন, বিকাশ ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে। এ কারণে মানুষ এখান থেকে অনেক ধরণের সেবা পাচ্ছেন। আমরা ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছি। এছাড়া ডিজিটাল লেনদেনের যেই ইকু সিস্টেম তা দিনদিন বড় হচ্ছে। এমএফএস প্রভাইডাররা এখন নতুন নতুন সেবা যুক্ত করছে। যে গ্রাহক আগে একটি দুইটি ট্রানজেশন করতেন সেবা বৃদ্ধির কারণে তারা নতুন নতুন সেবা গ্রহণ করছেন। নতুন নতুন মার্চেন্টরা যুক্ত হচ্ছেন আমাদের সঙ্গে। দেশে অনলাইন ব্যবসার বিস্তার ঘটছে। তার প্রভাবও পড়ছে। ব্যাংকগুলোও আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে গ্রাহকরা এখন ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে ঝুঁকছেন। ভবিষ্যতে এই প্লাটর্ফম আরো বড় হবে বলেও মনে করেন বিকাশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনের লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ করা যায়, করা যায় কেনা কাটা। সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, প্রবাসী আয় পাঠানো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের শীর্ষে। কম খরচ ও দ্রুত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টাকা পাঠাতে প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য হিসাব খুলছেন বিপুলসংখ্যক গ্রাহক। প্রতিমাসেই বাড়ছে গ্রাহকসংখ্যা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাই মোট পুরুষ গ্রাহক ১২ কোটি ৭৬ লাখ ২৭ হাজার ৮৩৮ জন। অপরদিকে নারী গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৭ জনে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৫১৫ জন। মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এক মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় তিন হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ৯০৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় পাঁচ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। এছাড়াও নগদ সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত।

Share This Article